ডুয়েল বুটিং এর সাথে আমাদের প্রায় সবারই পরিচয় আছে।একই পিসিতে দুই ড্রাইভে দুই অপারেটিং সিস্টেম,কম্পিউটার চালুর সময় ঠিক করে দিতে হয় কোনটি দিয়ে কোনটি দিয়ে পিসি রান করাবেন আপনি।কিন্তু এতেও অনেকে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না।কেননা আপনি হয়তো উইন্ডোজ সেভেন বা ভিসতা ব্যবহার করেন কিন্তু প্রোগ্রাম কম্পাটিবিলিটির কথা চিন্তা করে এক্সপিও রেখেছেন কম্পিউটারে,কিন্তু এক্সপি চালালে ইন্টারনেট নেই কিংবা এক্সপিতে নেই লেটেস্ট ড্রাইভার আপডেট যা কিনা সেভেনে পেতেন।মানে একটি অভাব পূরণ হলে আরেকটি অভাব তৈরি হয়ে যাচ্ছে নিজে থেকেই।লিনাক্স ডুয়েল বুটিং-এর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।অনেকে একসাথে ৩টি অপারেটিং সিস্টেমও ব্যবহার করেন সে প্রসংগে আর যাচ্ছি না।
এ ধরনের সমস্যায় আপনি একটা কথাই ভাবেন-ইশ!যদি দুইটা অপারেটিং সিস্টেমই একই সময়ে একই পিসিতে চালানো যেত!অনেক ভাল হতো! হ্যা পাঠক আপনার সেই স্বপ্ন কিন্তু এখন আর স্বপ্ন না।ঠিক এখন হবে না শব্দটা,আসলে অনেক আগে থেকেই এটি করা সম্ভব।কিন্তু অজ্ঞতার জন্য আমরা এই অতি সহজ কাজটা করতে পারিনি আজো।আজ আপনাদের সেই অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে একসাথে দুই অপারেটিং সিস্টেম চালানোর নাড়ী-নক্ষত্র জানিয়ে দিব।
শুনতে কি একটু অস্বাভাবিক ঠেকছে?কেন বলুন তো?অপারেটিং সিস্টেম আসলে কি?একটা সফটওয়ার বা প্রোগ্রাম তাই না?তাহলে একটা অপারেটিং সিস্টেমের ভেতরতো আরেকটা চালানোই যেতে পারে।খুব সহজ তাই না?সহজ কিংবা কঠিন বলতে পারব না,শুধু এটাই বলব দুইটা সিস্টেম একসাথে চালাবার সহজতম উপায়টাই এবার আপনাদের শেখাব আমি।অভিজ্ঞরা এতোক্ষণে নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন আমি কিসের কথা বলছি,হ্যা পাঠক-ভার্চুয়াল মেশিনের কথাই বলা হচ্ছে। সোজা বাংলায় একটাকে প্রধান অপারেটিং সিস্টেম ধরে সেটার ভেতর এপ্লিকেশন হিসেবে আরেকটা অপারেটিং সিস্টেম গেস্ট হিসেবে চালানোটাই ভার্চুয়াল মেশিনের মূল মন্ত্র।
আর নিঃসন্দেহে পিসিতে ভার্চুয়াল মেশিন চালাবার জন্য ভিএমওয়ার প্লেয়ার হচ্ছে সবচেয়ে সহজ এবং অন্যতম কার্যকর পন্থা।উইন্ডোজের যেকোন ভার্সন,লিনাক্স কিংবা ক্রোম- ভিএমওয়ার প্লেয়ার-এর কম্পাটিবিলিটি নিয়ে ভাবতে হবে না আপনাকে।২০০টির মতো অপারেটিং সাপোর্ট করে এই ভিএমওয়ার প্লেয়ার ।আর উইন্ডোজ সেভেনের এক্সপি মোডের চেয়েও এখানে আপনি অনেক ভালভাবে কাজ করতে পারবেন নিঃসন্দেহে এই কথা বলা যায়।এখন কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু করে দেই।আমি উইন্ডোজ সেভেনে কিভাবে উইন্ডোজ এক্সপি গেস্ট হিসেবে ইন্সটল করবেন তার উপায় বলব এখানে।অন্য যেকোন অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।আশা করি বুঝতে কোন সমস্যা হবে না।
>> প্রথমেই দেখতে হবে আপনার পিসি ভার্চুয়াল পিসি রান করানোর যোগ্যতা রাখে কিনা।আমি মূলত পিসির কনফিগারেশনের কথা বলছি।কিভাবে বুঝবেন?ধরছি আপনার মূল অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৭,আর আপনি চাচ্ছেন গেস্ট হিসেবে এক্সপি ইন্সটল করতে।এখন উইন্ডোজ এক্সপির আর সেভেন আলাদা আলাদা কনফিগারেশন যোগ করুন।বিশেষত র্যাম,২ গিগাবাইট র্যাম ছাড়া ভার্চুয়াল মেশিনের আশা করবেন না।কেননা এই সিস্টেমে পুরো প্রেশারটাই যাবে র্যামের উপর দিয়ে।আর প্রসেসরও ন্যূনতম কোর ২ ডুয়ো হওয়া উচিত।আর ভিএমওয়ার প্লেয়ার আপনার সি ড্রাইভে আলাদা ১৫০ মেগাবাইট স্পেস নিবে।
>> প্রথমেই ভিএমওয়ার প্লেয়ারটি ডাউনলোড করে নিন।এর সর্বশেষ ভার্সন হচ্ছে ৩.০.০ আর সাইজ ৯০ মেগাবাইটের মতো।
ডাউনলোড
>> ইন্সটলার ফাইলটি রান করান।ইন্সটলেশন ঠিকভাবে শুরু হলে এমন উইন্ডো দেখবেন।
>> এরপর নেক্সেটে গিয়ে কোথায় ইন্সটল করবেন তা দেখিয়ে দিন।নেক্সেটে গেলে ইন্সটলেশন শুরু হবে।অপেক্ষা করুন।
>> সফলভাবে ইন্সটলেশন শেষ হলে ভিএমওয়ার প্লেয়ার রিস্টার্ট চাইবে।পিসি রিস্টার্ট করুন।
>> রিস্টার্ট হবার ডেস্কটপেই ভিএমওয়ার প্লেয়ার-এর আইকনটি দেখতে পাবেন।এতে ক্লিক করে প্লেয়ারটি চালু করুন।
>> লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট ইয়েস করুন।
>> এবারে ভিএমওয়ার প্লেয়ার-এর হোমপেজ দেখতে পাবেন।বামে রয়েছে ইন্সটল করা ভার্চুয়াল মেশিনের লিস্ট(যা এই মুহুর্তে ফাঁকা) আর ডানে বিভিন্ন অপশন।আর উপরেও মেনুবারে যাবতীয় অপশন ও হেল্প ফাইল আপনি পাবেন।
>> আমরা এখন নতুন ভার্চুয়াল মেশিন তৈরি করব।এর আগে হার্ডড্রাইভের একটি ড্রাইভ পুরো ফাঁকা করে এনটিএফএস ফরম্যাটে নিয়ে নিন।সেটাই সবচেয়ে সুবিধাজনক ও নিরাপদ হবে।Create a New Virtual Machine-এ ক্লিক করুন।
>> এবারে ইন্সটলার ফাইলটি দেখিয়ে দিন।আপনি চাইলে অপারেটিং সিস্টেমের সিডি/বা ডিভিডি ড্রাইভে ঢুকিয়ে সেখান থেকে অথবা সরাসরি অপারেটিং সিস্টেমের আইএসও ফাইল দেখিয়ে সেখান থেকেও নতুন গেস্ট অপারেটিং সিস্টেম ইন্সতল করে নিতে পারবেন।পদ্ধতি নির্বাচন করে নেক্সটে যান।এই অবস্থাতেই ভিএমওয়ার প্লেয়ার আপনার গেস্ট অপারেটিং সিস্টেমের ফাইলটি ডিটেক্ট করে নাম নাম
>> উইন্ডোজের সিডি কী,উইজারনেম ও পাসওয়ার্ড প্রবেশ করান।
>> এবারে ভার্চুয়াল মেশিন(অপারেটিং সিস্টেম)-এর নাম ও তা কোথায় ইন্সটল করবেন তা দেখিয়ে দিন।
>> ভিএমওয়ার প্লেয়ার জানতে চাইবে ভার্চুয়াল মেশিনের জয়ন আপনি সর্বোচ্চ কতটুকু হার্ডডিস্ক স্পেস দিবেন সেটা।কাজের ব্যপ্তী এবং আপনার হার্ডডিস্কের অবস্থা বুঝে এটি ঠিক করুন।উইন্ডোজ এক্সপি গেস্ট হলে ৫ গিগাবাইট যেমন যথেষ্ঠ আবার ভিসতার জন্য কিন্তু ১৫ গিগাবাইট লাগবে।আবার আপনি যদি গেস্ট সিস্টেমে বড় কোন প্রোগ্রাম চালাতে চান সেটির স্পেস-এর কথাও মাথায় রাখুন।
>> এবারে ফাইনাল স্টেজ।আপনার ভার্চুয়াল মেশিনের যাবতীয় তথ্য এখন দেখতে পাবেন।আর এতে কিকি ডিভাইস থাকছে তাও দেখতে পাবেন।সাধারনত ডিফল্টভাবে সাউন্ট,ল্যান,সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ সবই এখানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
>> এখানে Customize Hardware-এ ক্লিক করুন।প্রথমেই দেখবেন র্যাম।এখানে ভিএমওয়ার প্লেয়ারই আপনাকে গেস্ট-এর মিনিমাম ডিমান্ড,রিকমান্ডেড ডিমান্ড এবং আপনার সিস্টেমের টোটাল র্যামের পরিমান জানাবে।বামে হার্ডওয়ার লিস্টে ক্লিক করে প্রতিটির সেটিং এবং তা প্রতিবারই ভার্চুয়াল মেশিনের সাথে চালু হবে কিনা বা কিভাবে কাজ করবে তা ঠিক করে দিন।মনে রাখবেন ভার্চুয়াল মেশিনে সাচ্ছন্দের সাথে কাজ করার জন্য আপনার পিসির হার্ডওয়ার বুঝে এইসব অপশন ঠিক করাটা খুবই জরুরি।কাজ শেষ করে Finish-এ ক্লিক করুন।
>> ভিএমওয়ার প্লেয়ার-এর মেইন মেনুতে ফিরে আসবেন এখন আপনি।Play virtual machine-এ ক্লিক করুন।
>> উইন্ডোজ এক্সপি ইন্সটলেশন শুরু হবে।শুধু মাথায় রাখু সাধারনভাবে যেভাবে যতক্ষন ধরে এক্সপি ইন্সটল হয় এখানেও ভিএমওয়ার প্লেয়ার-এর ভেতর এখন ঠিক তাই হবে।সুতরাং ধৈর্য্য করে কাজ করে যান।ফরম্যাট,কপি,লোডিং,সেটআপ সবই দেখতে পাবেন।
>> কাজ হলে আপনি চাইলে ভিএমওয়ার প্লেয়ার দিয়ে অথবা যেখানে গেস্ট অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করেছেন সেখানে গিয়েও ভার্চুয়াল মেশিন রান করাতে পারেন।ব্যস আর কি!এবার একসাথে উপভোগ করুন দুইটি অপারেটিং সিস্টেম।
আশা করছি সবারই কাজে আসবে লেখাটি।যেকোন সমস্যা হলে এখানে তা আমাকে জানান
জেনে রাখুন পিসির কনফিগারেশন
কম্পিউটারের যে কোনো সমস্যা আর হার্ডওয়্যারের সমস্যাতো তো বটেই সবার আগে আপনার প্রয়োজন পড়বে পিসির কনফিগারেশন অর্থাৎ প্রসেসর, র্যাম, মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, সাউন্ড কার্ড, এজিপি কার্ড কোনটি কোন কোম্পানির কি মানের তা জানার। দেখা যায় যে বেশিরভাগ মানুষই অন্য কারো সহায়তা বা দোকানির পরামর্শে কম্পিউটার কেনেন এবং পরে যখন কোনো সমস্যায় পড়ে অন্য কারো দারস্থ হন তখন আর কনফিগারেশন বলতে পারেন না। এতে সমাধানকারীকে অতিরিক্ত ঝামেলায় পড়তে হয়। এই তথ্যগুলো তাই জেনে নিয়ে দরকার পড়লে লিখে রাখুন। তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধানকারীর জন্য সমস্যার কারণ খুঁজে পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়।
এই বেসিক কনফিগারেশনগুলো জানতে বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। মাই কম্পিউটারে রাইট ক্লিক করে প্রোপ্রার্টিজে গিয়ে জেনারেল ট্যাব থেকে জেনে নিতে পারবেন প্রসেসর, র্যাম ও অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য। গ্রাফিক্স বা ডিসপ্লে প্রোপ্রার্টিজে গিয়ে ইনফরমেশন থেকে জানতে পারবেন গ্রাফিক্সকার্ড সংক্রান্ত তথ্য। আর অনেকক্ষেত্রেই কম্পিউটার কেনার ক্যাশমেমোতেই এসব বিস্তারিত লিখা থাকে। আরেকটি কাজ করতে পারেন। কোনো অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর সহায়তায় জেনে নিতে পারেন তথ্যগুলো। যেভাবেই যাই জানুন না কেন তা ভালোভাবে লিখে যত্নসহকারে রেখে দিন।
বিল্ট ইন মানে কি?
এখন প্রায় সব কম্পিউটারেই বিল্টইন কিছু না কিছু থাকেই। যেমন- এজিপি কার্ড, সাউন্ড কার্ড, ল্যান কার্ড ইত্যাদি। বিল্টইন অর্থ এই হার্ডওয়্যারটি আপনার মাদারবোর্ডে দেয়াই আছে। আপনি আলাদা না কিনে এটি দিয়েই কাজ চালাতে পারেন। কিন্তু কথায় আছে সস্তার দশ অবস্থা। কোম্পানি বা দোকানি যতই গলা ফটাক না কেন এটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার দরকার পড়ে না যে, পারফরমেন্সে বিল্টইন হার্ডওয়্যারটি কখনই স্বতন্ত্র হার্ডওয়্যারের সমকক্ষ হতে পারে না। তবে যারা সাধারণ বা মাঝারি মানের ব্যবহারকারী তাদের জন্য বিল্টইন সাউন্ড বা এজিপি কার্ডই যথেষ্ঠ। আর বিল্টইন ল্যান কার্ড দিয়ে সমস্যা ছাড়াই কাজ চালাতে পারেন। তবে একটা কথা। যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন নেন তাদের সবার ল্যান কার্ডের ফিজিকাল বা ম্যাক এড্রেস কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইএসপি নিয়ে রেকর্ড করে রাখে।ফলে মাদারবোর্ডে কোনো সমস্যা হলে নেট লাইন নিয়ে বিপদে পড়বেন আপনি। এক্ষেত্রে আইএসপি’র শরণাপন্ন আপনাকে হতেই হবে। আর আলাদা ল্যানে যে বাড়তি সুবিধা একই কারণে পাবেন তা হচ্ছে এটি অন্য পিসিতে লাগিয়ে একই নেট কানেকশন কাজের সময় ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।

আর বিল্টইন সাউন্ড কার্ড বা এজিপিতে সমস্যা হলে তা বেশ বিড়ম্বনাকর। অনেকক্ষেত্রে মাদারবোর্ডের উপরই চাপটা পড়ে বেশ জটিলাকার ধারণ করে। তবে মনে রাখবেন, বিল্টইন এজিপি মানেই এটি আপনার সিস্টেম থেকে র্যাম শেয়ার করে। তাই বিল্টইন এজিপি ব্যবহার করলে বাড়তি র্যাম লাগানোটাই ভালো। নাহলে সিস্টেম স্লো হয়ে যাওয়া বা হ্যাং করাসহ অনেক সমস্যাই হতে পারে আপনার।একটা সহজ পয়েন্ট উল্লেখ করি।ক্রিয়েটিভের ভালোমানের সাউন্ড কার্ডের দাম ৪০০০ টাকার উপরে,এনভিডিয়ার ৯৬০০ জিটি ১ গিগাবাইট র্যামবিশিষ্ট এজিপির দাম ১৫০০০ টাকা।আর সুপার-ডুপার সাউন্ড(!),১৭৫৮ মেগাবাইট পর্যন্ত এজিপি বিশিষ্ট মাদারবোর্ড আপনি ৭০০০ টাকাতেই পাবেন!!আর কিছু বলতে হবে?
পাওয়ার,পাওয়ার সাপ্লাই-দেখে শুনে কিনুন
কম্পিউটারের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ অংশ এই পাওয়ার সাপ্লাই। এর কারণে অনেক সমস্যাই হতে পারে। ইউপিএস কেন ব্যবহার করবেন, কেন করবেন না এই নিয়ে বেশি কিছু বলব না। শুধু বলব অস্থিতিশীল ভোল্টেজ সাপ্লাই আপনার মূল্যবান হার্ডওয়্যারের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আর্থিং। ভালো আর্থিং কম্পিউটারের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। কোনো ইলেকট্রিশিয়ানকে ডেকে আপনার আর্থিং ঠিক আছে কিনা তা চেক করে নিতে পারে। আর্থিং না থাকার কারণে অনেক সময় কোনো কোনো হার্ডওয়্যার ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। মনিটর কাঁপতে পারে, কেসিং-এর বডি শক করতে পারে; এমনকি মাদারবোর্ড বা হার্ডডিস্কের ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।

আরেকটি সমস্যা অনেকসময় দেখা যায়। কম্পিউটারের উপর যখন বেশি চাপ পড়ে। হাইএন্ড গেম বা এপ্লিকেশন রান করতে যায় তখন পিসি রিস্টার্ট করে। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে অপর্যাপ্ত পাওয়ার সাপ্লাই। অর্থাৎ কাজের সময় আপনার পাওয়ার সাপ্লাই মাদারবোর্ডে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। এক্ষেত্রে আপনাকে পাওয়ার সাপ্লাইটি পরিবর্তন করতে হবে।
জানেন কি কম্পিউটারের ভেতরের যাবতীয় হার্ডওয়্যার চলে ডিসি পাওয়ারে? এসি ২২০ ভোল্ট পাওয়ারকে পাওয়ার সাপ্লাই ডিসি ৩.৫ ভোল্ট, ৫ ভোল্ট ও ১২ ভোল্টে রূপান্তর করে মাদারবোর্ডে সরবরাহ করে। ফলে সিপিইউর ভেতর যে কারেন্ট থাকে তা বিপদজনক নয়। তবে যদি পাওয়ার অন করে কখনও কাজ করতে হয় তখন খেয়াল রাখবেন যেন শর্টসার্কিট না হয় এবং আপনার পায়ে যেন শুকনা জুতা থাকে।
পোস্ট করেছেন
Md.Kawsar
৭:০৮:০০ PM
আগের পর্বে বলেছিলাম কিভাবে কম্পিউটার কেসিং খুলতে হবে সে ব্যাপারে।এবারে বলব কম্পিউটার চালু না হলে আপনি কি কি করতে পারেন সে ব্যাপারে কিছু কথা।

কম্পিউটার চালু হচ্ছে না: কি করবেন এখন?
এটিকে একটি পরিচিত সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করতে চাই। নিয়মিত কম্পিউটার চালু হয় না এমনটা বললে মনে হয় ভুল বলা হবে না। নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে এই সমস্যার একটাই সমাধান। তা হচ্ছে বিক্রেতার শরণাপন্ন হয়ে অযথা পয়সা খরচ। দেখি তো আপনাকে বাঁচাতে পারি কিনা। নিচের কথাগুলো শুনুন মনোযোগ দিয়ে।
>> পাওয়ার সুইচ অন করার পর সিস্টেমের ইন্টারনাল স্পিকার কয়টা আওয়াজ করলো খেয়াল করুন। যদি বীপ সংখ্যা এক হয় তার মানে কম্পিউটার ডিসপ্লে আউটপুট পাচ্ছে না।অথবা কীবোর্ড মাদারবোর্ডের সাথে ঠিকমতো সংযুক্ত না হলেও এমনটা হতে পারে।
>>যদি একটি বড় বীপের পর দুটি ছোটো বীপ হয় তারমানে র্যাম পাচ্ছে না আপনার মাদারবোর্ড।র্যাম পরিবর্তন না স্লট পরিবর্তন করে দেখুন।
>>যদি একটি বড় বীপের পর তিনটি ছোট বীপ হয় তাহলে বুঝবেন নিশ্চিতভাবেই ডিসপ্লে বা গ্রাফিক্স আউটপুটের সমস্যা।
>>আর যদি একটা বড় বীপ তারপর চারটা ছোট বীপ হয় তারমানে আপনার মাদারবোর্ড বা গুরুত্বপূর্ণ কোন হার্ডওয়ার নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা ঠিকমতো কাজ করছে না।
>>তবে এর জন্য আপনার পিসিতে ইন্টারনাল স্পীকার কিন্তু থাকতে হবে। অনেক মাদারবোর্ডে ইন্টারনাল স্পীকার বিল্ট-ইন থাকে।অন্যগুলাতে আলাদা লাগাবে হয়।সাধারনত কম্পিউটার কেনার সময় বিক্রেতাই এটি দিয়ে দেয় তবে অনেকসময় ভুলে তা ঠিকমতো লাগানো নাও থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে আপনার মাদারবোর্ডের বক্সে দেখুন স্পীকার পান কিনা।নইলে সময় করে বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে আসুন।বুঝতেই পারছেন কেন আমি এটাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছি।
>> মনিটরের দিকে তাকান। এটি কি স্লীপ মোডে আছে ? অর্থাৎ এর লেড লাইট কি জ্বলছে নিভছে কিনা খেয়াল করুন। যদি তা না হয় অর্থাৎ লেড লাইট জ্বলেই থাকে এবং মনিটরে কিছু না কিছু দেখা যায় তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার মাদারবোর্ড ও গ্রাফিক্স কার্ড ঠিক আছে।সমস্যাটা ছোটোখাটো।নো টেনশন!
>> যদি পাওয়ার অন করাই সম্ভব না হয় তাহলে কেসিং খুলে দেখুন নিঃসন্দেহে আপনার পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা। খোঁজার চেষ্টা করুন সমস্যাটা কোথায়।
>> এবারে ধরুন মাদারবোর্ডের পাওয়ার লেড জ্বলছে কিন্তু কেসিংয়ের পাওয়ার বাটন চাপলেও পিসি রেসপন্স করছে না তখন বুঝতে হবে কেসিংয়ের পাওয়ার সাপ্লাইয়ে কোনো সমস্যা হবার কারণে এটি পর্যাপ্ত ভোল্টেজ আউটপুট দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে অন্য পাওয়ার সাপ্লাই লাগিয়ে চেষ্টা করে দেখুন।
>> এবারেও কাজ হয়নি ? হতে পারে আপনার পাওয়ার সুইচেই সমস্যা। অভিজ্ঞ কাজ জানা ব্যবহারকারীরা সম্ভব হলে মাদারবোর্ডের ম্যানুয়াল দেখে মাদারবোর্ডের পাওয়ার বাটন পিন দুইটি বের করে তা কোনোভাবে কন্টাক্ট করে দেখতে পারেন কাজ হয় কিনা। তবে অনভিজ্ঞরা এই কাজটি না করতে যাওয়াটাই ভালো।
>> পাওয়ার সংক্রান্ত সমস্যার আশাকরি সমাধান হলো। এবারও কম্পিউটার চালু হচ্ছে না ? তাহলে বুঝতে হবে র্যামের সমস্যা। র্যামের স্লট পরিবর্তন করে নতুবা অন্য র্যাম লাগিয়ে দেখুন।
>> কম্পিউটার বুট হলো ঠিকঠাক কিন্তু উইন্ডোজ লোডিং-এর আগেই আটকে গেছে ? তখন বুঝতে হবে আপনার হার্ডডিস্কের সমস্যা। হার্ডডিস্কের পাওয়ার ও ডাটা ক্যাবলের কানেকশন চেক করুন। সম্ভব হবে মাদারবোর্ডের যে কানেক্টরে ক্যাবলটি লাগানো তা পরিবর্তন করে দেখুন। এছাড়া এমনটি কি হচ্ছে কম্পিউটার ঠিকমতো চালু হচ্ছে হয়তো অপারেটিং সিস্টেমও লোড হচ্ছে তারপর ধুড়ুম করে পিসি বন্ধ হয়ে রিস্টার্ট করছে। এটি সম্ভবত প্রসেসরের কুলিং ফ্যান বা হিটসিংক ও প্রসেসরের কানেকশনের দুর্বলতার কারণে হচ্ছে। চেক করে দেখুন ফ্যান ঠিকমতো ঘুরছে কি-না বা ফ্যানসহ সবকিছু ঠিকমতো টাইট আছে কিনা। পারলে কুলিং ফ্যানসহ হিটসিংক খুলে আবারও লাগান। কুলিং ফ্যান নিচের ছবির মতো বিপরীত দুইপাশে একসাথে চাপ দিয়ে খুলতে হয়।

আর হঠাৎ করে বন্ধ না হলে মানে একটু সময় নিয়ে সংকেত দিয়ে বন্ধ হওয়া মানে ভাইরাসের আক্রমণের শিকার আপনি।
>> হঠাৎ বলতে আমি এটা বুঝাচ্ছি যে কম্পিউটার চলার সময় পাওয়ার চলে গেলে যেভাবে বন্ধ হয় সেরকম ঘটনা।
>> এছাড়াও কোনো না কোনো ক্যাবল লুজ/ নষ্ট হয়ে যাবার কারণেও কম্পিউটার চালু হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই ব্যাপারটিও খেয়াল রাখবেন।
প্রধান এই সমস্যাগুলোর কারণেই কম্পিউটার চালু হয় না। তবে বুঝতেই পারছেন এই অংশে শুধুমাত্র হার্ডওয়্যারজনিত সমস্যার কথাই বললাম, অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত সমস্যা এখানে আলোচনা করিনি।
পোস্ট করেছেন
Md.Kawsar
৭:০৪:০০ PM
কম্পিউটার যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার কম্পিউটিং জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ সমস্যা।আজ সফটওয়ারের এই সমস্যাতো কাল ঐ হার্ডওয়ার সমস্যা করছে।সেই ডস থেকে উইন্ডোজ সেভেন,পেন্টিয়াম ১ থেকে কোর আই সেভেন-সবসময়ই আপনার পিসির সাথেই ছিল এই সমস্যা নামক বস্তুটা!ইন্টারনেটে এই টপিকে তেমন কোন ভালো বাংলা লেখা নেই।তাইতো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে লিখাছি আজকের এই আর্টিকেলটি। কয়েক পর্বের এই লিখায় আমি চেষ্টা করব পিসির বিভিন্ন ট্রাবলশ্যুটিং এবং সমস্যা ও তার সমাধানের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে। আশা করি সবারই কাজে আসবে।
ট্রাবলশ্যুটিং-এর হাতেখড়িঃ কেসিং খুলবেন যেভাবে
যারা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখেন না তাদের জন্য এই অংশটি। এখানে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলোর সাথে এবং জানাব কিভাবে কেসিং খুলতে হয় তা।
>> সাধারণত কেসিং-এর পেছনে এটি খোলার ২+২=৪টি স্ক্রু থাকে। কেসিং খোলার আগের পাওয়ার সাপ্লাই অফ করুন। মাদারবোর্ডের পেছন থেকে সব প্লাগ খুলে ফেলুন।
>>সাধারণত সামনে থেকে কেসিংটাকে দেখলে এর বামপাশের অংশটি খুলতে হয়। এর পেছনে স্ক্রু দুটি খুলতে ভালো চারকোণা স্ক্রু ড্রাইভার লাগবে আপনার। খোলা স্ক্রু সযত্নে রাখুন।
>> স্ক্রু খোলা হয়ে গেলে কেসিং-এর পাশ থেকে কভারটি আলাদা করে নিন। সাধারণত কভারটি পেছনদিকে কিছুটা স্লাইড করে খুলতে হয়।
>>কেসিং খুলেছেন ? ভেতরে তাকান। মূল যে বড় সার্কিট বোর্ডটি দেখছেন তাই মাদারবোর্ড। আর পাওয়ার সাপ্লাই থাকে কেসিং এর উপরে পেছন দিকে। পাওয়ার সাপ্লাই থেকে অনেকগুলো লাল, হলুদ, কালো বা নীল তার বের হয়ে আসে। এর কিছু সংযুক্ত মাদারবোর্ডে কিছু বা সরাসরি অন্য হার্ডওয়্যারে যেমন- সিডি ড্রাইভ, ফ্লপি ড্রাইভ, হার্ডডিস্ক।

>> মাদারবোর্ডে প্রসেসর কোনটি তা বুঝতে এর কুলিং ফ্যান খুঁজে বের করুন। সাধারণত এটি মাদারবোর্ডের উপরে কিছুটা বামে থাকে। প্রসেসর ফ্যানের জন্য সরাসরি দেখা সম্ভব নয়।
>>র্যাম সাধারণ প্রসেসরের ডানপাশে থাকে। মডেলভেদে ২-৪টি স্লট, লম্বাকৃতির।

>>সাউন্ডকার্ড কোনটি বুঝতে হলে খুঁজে বের করুন স্পিকারের ইনপুট জ্যাক কোথায় লাগে সেই ডিভাইসটি।
>> একইভাবে মনিটরের ক্যাবল দিয়ে জানতে পারবেন কোনটি আপনার গ্রাফিক্স কার্ড।
>> একই উপায়ে মডেম (টেলিফোনের তার), ল্যান কার্ড (ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার) খুঁজে বের করতে পারবেন আপনি।
>> চিকন চিকন লাল, হলুদ, কাল বা নীল তারগুলো পাওয়ার ক্যাবল। সাদা বা লাল চওড়া ক্যাবলগুলো ডাটা ক্যাবল।
>> সাধারণ একটি পিসিতে কেসিং-এর পেছনে পাওয়ার কর্ড, মনিটর কর্ড, মাউস ও কী-বোর্ড, স্পিকার ইনপুট এগুলো প্রাথমিক অনুসঙ্গ যা সব পিসিতেই আছে।>>বিভিন্ন ক্যাবল আলাদা রকমের হওয়াতে সবচেয়ে বড় সুবিধা এক ধরনের কানেকশন আপনি ভুল করে চাইলেও অন্যটিতে লাগাতে পারবেন না ।
